নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি কি এখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে না সংগঠন গোছাবে-এ নিয়ে দলটির মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দলের সিনিয়র একাধিক নেতা মনে করেন যে, আন্দোলন করার চেয়ে এখন আগে সংগঠন গোছানো দরকার। হঠাৎ করেই তীব্র গণআন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। অন্যদিকে বিএনপির অপেক্ষাকৃত তরুণরা মনে করছেন, আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। এখন সংগঠন গোছানোর সময় সংগঠন নয়। সংগঠন যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায়ই সরকার পতনের আন্দোলন করতে হবে। গতকাল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেছেন। এই ভিডিও কনফারেন্সের বৈঠকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’
বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন যে, সবার আগে বিএনপির সংগঠন গোছানোর দরকার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ড. মঈন খান মনে করেন, এখন যে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা, নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ জেলে এরকম বাস্তবতার বিএনপির পক্ষে এখন বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা অসম্ভব ব্যাপার। এই ধরনের আন্দোলন করলে সরকার আরও আক্রমণাত্মক হবে এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
তিনি তিন ধাপের পরিকল্পনা প্রস্তাব গতকালের বৈঠকে উপস্থাপন করেন। এই পরিকল্পনা প্রস্তাবের মধ্যে ছিল প্রথমত, সংগঠনকে গোছানো, সম্মেলনগুলো করা এবং নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করা। দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত নেতাকর্মীরা আটক রয়েছেন তাদেরকে অবিলম্বে মুক্তির ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিএনপি সম্পর্কে যে ভুল বোঝাবুঝিগুলো তৈরি হয়েছে, সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটানো। আর এটা যদি না করা যায় সে ক্ষেত্রে বিএনপির জন্য আন্দোলন হবে হঠকারিতা।
তবে ওই বৈঠকেই বিএনপির আরেক নেতা রুহুল কবির রিজভীর সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, এখন কাউন্সিল বা সংগঠন গোছানোর সময় নয়। বিএনপির সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী। বিএনপির সংগঠন শক্তিশালী সেটা প্রমাণ পাওয়া গেছে নির্বাচনে। নির্বাচনে সরকার অনেক টোপ দিয়েছিল, অনেককে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নানা রকম লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। বিএনপিকে ভাঙার যে সরকারের নীলনকশা ছিল রুহুল কবির রিজভীর ভাষায় সেই নীলনকশা সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কাজেই এখন আর সরকারকে সময় দেওয়া যায় না।
রুহুল কবির রিজভী এটিও বলেছেন যে, যেহেতু এখন দেশে একটি সংকট রয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষ মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, সরকারের ভিতরেও নানা রকম সমস্যা, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তুঙ্গে, সবচেয়ে বড় কথা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে একধরনের আত্মতুষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এরকম বাস্তবতায় আন্দোলন করার এখনই সময়।
রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছে এ কারণে যে শীর্ষ নেতারা আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দিতে পারছে না। যদি আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দেওয়া যায় এবং দলকে যদি আবার আন্দোলনের মধ্যে রাখা যায় তাহলে কর্মীরা এমনি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। বিএনপির এই নেতা বলেছেন যে, সাধারণ মানুষ অপেক্ষায় আছে বিএনপি কখন আন্দোলন করে তা দেখার জন্য। তবে দুই নেতা এই বক্তব্যের এক পর্যায়ে বাগবিতণ্ডা তৈরি হয়। উভয় পক্ষই উত্তপ্ত হয়ে উঠে। দুই পক্ষ দুই পক্ষকে অবিবেচক এবং সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে এমনটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উপস্থাপন করেন। এর ফলে শেষ পর্যন্ত বিএনপির ওই সভায় কোন সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আন্দোলন না সংগঠন এই নিয়ে বিএনপির কোন্দল এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।’