নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জেলে। তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও জেলে। মির্জা আব্বাসের মতো জনপ্রিয় নেতাও এখন কারান্তরীণ রয়েছেন। এই অবস্থায় দলের দৃশ্যমান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ড. মঈন খান। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তার চেয়েও বড় পরিচয় তিনি কূটনীতিক অঙ্গনে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পরিচিত মুখ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা তাকে পছন্দ করেন এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
যখন দলের সিনিয়র নেতারা জেলে তখন মঈন খান অঘোষিত ভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সমাবেশ এবং অনুষ্ঠানে তাকেই প্রধান অতিথি করা হচ্ছে এবং তিনি মুখ্য আলোচক হিসেবে সরকারের সমালোচনা করছেন, রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন। বিএনপির অন্য স্থায়ী কমিটির সদস্যদের চেয়ে তিনি ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। এর একটি বড় কারণ হল কূটনৈতিক অঙ্গনে তার গ্রহণযোগ্যতা। আপাদমস্তক নিপাট ভদ্রলোক হিসাবে পরিচিত ড. মঈন খানের সঙ্গে এখন প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয়েছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে। আন্দোলনের কৌশল নিয়েই এই বিরোধ বলে জানা গেছে।’
ড. মঈন খান কূটনীতিকদের পরামর্শ চলেন এবং তিনি কোন রকম সহিংস বা রাজপথে আন্দোলনের ঘোরতর বিরোধী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কূটনীতিকরা যেমনটি চান অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মহাসমাবেশ, আলোচনা ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো মঈন খানও তেমনটি চান। অন্যদিকে নির্বাচনের পর তারেক জিয়া চেয়েছিলেন জোরদার আন্দোলন। হরতাল, অবরোধ অব্যাহত রাখতে, সরকারকে চাপে ফেলার জন্য ঘেরাও এবং জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি সচল রাখতে। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি মঈন খানের কারণে। কিন্তু তারেক জিয়া এখন আর রক্ষা করতে পারছেন না। তিনি আন্দোলন নতুন করে শুরু করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। গত দুইদিনে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার সঙ্গে ড. মঈন খান এবং বিএনপির যে সমস্ত নেতারা জেলের বাইরে থেকে আন্দোলন পরিচালনা করছেন তাদের সাথে তীব্র মতবিরোধ হয়েছে। তারেক জিয়া চাইছেন হরতাল, অবরোধের কর্মসূচি দিতে। বিশেষ করে যেদিন জাতীয় সংসদে অধিবেশন ডাকা হবে সেদিন সারাদেশে হরতাল অথবা সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিতে। একই সাথে যে হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সেটা যেন কার্যকর হয় সেই প্রস্তাবও দিয়েছিল তারেক জিয়া। কিন্তু মঈন খান বলেছেন, এই ধরনের কর্মসূচি এখন হঠকারিতার সামিল হবে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আকাঙ্ক্ষা কথা সুষ্পষ্টভাবে তারেক জিয়াকে জানিয়েছেন।
মঈন খান ওই বৈঠকে বলেছেন, এখন দলের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দেওয়া এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে একটা সমঝোতার মাধ্যমে দল পুনঃগঠন করা এবং সরকারের মৌখিক সমালোচনা করা। কোনো রাজপথের কর্মসূচি পশ্চিমারা পছন্দ করছে না-এমন বার্তাটি মঈন খান দিয়েছেন। কিন্তু তারেক জিয়া এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গতকাল অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে তারেক জিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে মঈন খানকে বিদেশিদের দালাল হিসেবে অভিহিত করেছেন। মঈন খান এই বক্তব্যে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন বলে পাল্টা মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, হঠকারিতা বিএনপির রাজনীতি নয়। এখন তারেক-মঈন খানের এই বিরোধী নিয়ে বিএনপির মধ্যে প্রকাশ্য চর্চা হচ্ছে। তবে মঈন খান সাফ জানিয়েছেন তিনি দরকার হলে পদত্যাগ করবেন। কিন্তু কোন সহিংসতা বা জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতিকে অনুমোদন দেবেন না।’