নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের পর থেকেই অভিমান করে আছে ১৪ দলের নেতারা। ১৪ দলের নেতাদের এই অভিমান ভাঙানোর কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেনি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার আদর্শিক জোট হিসেবে পরিচিত ১৪ দলের শরিকদেরকে ছয়টি আসন দিয়েছিল। যে ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থীদের সরিয়ে দিয়ে নৌকা প্রতীক দিয়েছিল। কিন্তু শরিকরা এই ছটি আসনের মধ্যে মাত্র দুটিতে বিজয়ী হতে পেরেছেন। ১৪ দলের হেভিওয়েট নেতা হাসানুল হক ইনু, ফজলে হোসেন বাদশা এই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।
১৪ দলের নেতারা মনে করেন এই পরাজয় হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে এবং আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ১৪ দলের প্রার্থীদের বিরোধিতা করেছে, তাদেরকে সহযোগিতা করেনি। এখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যে হস্তক্ষেপ এবং সহানুভূতির প্রয়োজন ছিল তা দেখানো হয়নি। এরপর থেকেই ১৪ দলের নেতারা অভিমান করে আছেন। ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদের হাসানুল হক ইনু নির্বাচনের পরপরই তার আসনে আওয়ামী লীগের লোকজন তাকে হারিয়ে দিয়েছেন এমন অভিযোগ করেছেন। এমনকী তিনি আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতাকেও দোষারোপ করেছেন প্রকাশ্যে। এ রকম বাস্তবতায় ১৪ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। কিভাবে ১৪ দলকে আবার এক রাখা যায় এ নিয়েও কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়নি। বরং আওয়ামী লীগের নেতারা এখন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, মারামারি, কাটাকাটি হানাহানি দূর করার জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
প্রশ্ন উঠেছে ১৪ দল থাকবে কি থাকবে না। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন ১৪ দল নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। নির্বাচনের আগ থেকেই ১৪ দল নিয়ে আওয়ামী লীগের অনাগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ১৪ দল আওয়ামী লীগের জন্য এখন আর অ্যাসেট নয়, বরং লায়াবিলিটিতে পরিণত হয়েছিল। ১৪ দলের যে সমস্ত শরিক দলগুলো আছে, তারা অধিকাংশই নামসর্বস্ব দল। গত ১৫ বছর ধরে তারা ক্ষমতার আশেপাশে থাকলেও এখন পর্যন্ত সংগঠন গোছাতে পারেনি। বরং তাদের সংগঠন সঙ্কুচিত হয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের কাছ থেকে নৌকা প্রতীক নিলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাল আচরণ করেনি। স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক করে অবস্থান করার নীতি তারা গ্রহণ করেননি।
এ প্রসঙ্গে ঐ নেতা কুষ্টিয়ার উদাহরণ দেন। যেখানে হাসানুল হক ইনু তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার প্রধান বিরোধ ছিল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধের কারণেই এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছেন।’
পিরোজপুরেও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখতেন না। তার নিজস্ব বলয়ের বাইরে তিনি কিছুই করতেন না।
আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ১৪ দলের শরিকরা মনে করছে আওয়ামী লীগ তাদেরকে জিতিয়ে আনবে, এটা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। কিন্তু তারা যে নিজেদের জনপ্রিয়তা দেখাবেন এবং জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইবে নেই যোগ্যতাটুকুও তাদের নেই।’
আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে ১৪ দল রেখে তাদের লাভ কি? ১৪ দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনের জন্য কোন উপকার করছে না, বরং ক্ষতি করছে। আবার জাতীয় পর্যায়েও ১৪ দল যে আওয়ামী লীগের জন্য বড় কোন অবদান রাখছে এমনটিও নয়।’
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে শরিকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেন দরবার করা। তারা যেন নির্বাচনে আসে। বিশেষ করে বাম মোর্চার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার জন্য ১৪ দলের কয়েকজন সেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা মনে করেন ১৪ দলের যে সমস্ত শরিকরা আছেন তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ, নিজেদের আখের গোছানো ছাড়া অন্য কোন কিছুই দেখেন না। আওয়ামী লীগ তাই মনে করে ১৪ দলের ঐতিহাসিক প্রয়োজন এখন ফুরিয়ে গেছে। তারপরও দেখার বিষয় ১৪ দলের মধ্যে যে অভিমান এবং হতাশা তা দূর করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি তি উদ্যোগ গ্রহণ করেন।’